অমানিশি by SAYANI SARKHEL


মোহিনী, নাফিসা, তনিমা, জেনি আর দীপ্তশ্রী | পাঁচ মূর্তি। প্রত্যেকেই কলেজ স্টুডেন্ট ফাইনাল ইয়ারের। তবে সাবজেক্ট প্রত্যেকের আলাদাই ছিল। যদিও সিলেবাসে কি কি আছে সেটা কেউ জানত না | এরা এতো ক্লোজফ্রেন্ড ছিল যে দেখে মনে হতো যেন ১৫-১৬ বছরের বন্ধুত্ব। আসলে এদের দেখা কলেজের প্রথম বছরে।একসাথে থাকতে থাকতে প্রত্যেকেই একে অপরের বেস্টফ্রেন্ড হয়ে ওঠে। বলা ভালো একে অপরের পরিপূরক হয়ে ওঠে|
       মোহিনী রিটায়ার্ড আর্মি অফিসারের মেয়ে।পড়াশুনোতে মোটামুটি। ছেলেদের নাচানো আর নেশাকরা তার কাজ।তবে আর যাই হোক এদের সাথে সে খুবই ভালো। হাসিঠাট্টা করতে সে ওস্তাদ। তনিমাকে সবসময় জ্বালানো  তার স্বভাব ছিল।
        নাফিসা ব্যবসায়ী ঘরের মেয়ে।স্বভাব চরিত্র লেখাপড়াতে ভালোই।প্রেমে ছ্যাকা খাওয়া পাবলিকদের মধ্যে নাফিসাও ছিল।তাই এসবের থেকে বন্ধুত্বই তার কাছে বেশি। 
      দীপ্তশ্রীর বাবা নেভিতে চাকরি করতেন।বাড়ি থেকে দূরে থাকতেন,তার মধ্যে একমাত্র মেয়ে,তাই বাবার আদরের বাদরিনী ছিল দীপ্তশ্রী।দেখতে ভালো, লেখাপড়াতে নবডঙ্কা। পরীক্ষার সমর নকলের বন্যাবয়ে যেত। মাসে ৪০০০ টাকা হাতখরচা পেলেও ফুচকা খাবার পর তার টাকা অন্যদের দিতে হতো।আর বদভ্যাস ছিল তার সুখটান। 
          জেনি পৃথিবীতে একাই।বাবা মা তার কেউই ছিলোনা।কিন্তু পৈত্রিক সম্পত্তি অঢেল থাকায় সে নিজেকে রানী এলিজাবেথ এর সমান মনে করতো নিজেকে।স্বভাব চরিত্র তার ভালোই।একা একা পথ চলতে চলতে সব প্রতিকূলতাকে জয় করেছিলো সে।
            এই চারজনের থেকে পুরোটাই আলাদা ছিল তনিমা। শান্ত স্বভাবের মেয়ে,লেখাপড়াতে সবাইকে ছাড়িয়ে। তবে তার কথায় জড়তা ছিল এককথায় তোতলা। বাবা তার থানার ওসি। ভূত প্রেত বাঘ ভাল্লুক এর থেকে বাবাকে সে বেশি ভয় পেতো ।
          প্রত্যেকবারই পরীক্ষা শেষ হবারপরে পাঁচজন মিলে ঘুরতে যেত। এবারো ব্যতিক্রম হলোনা।পরীক্ষার লাস্টদিন হল থেকে বেরিয়ে পাঁচ মূর্তি প্ল্যান করতে বসলো।
(মোহিনী )_ “ তাহলে এবার কোথায় যাবি??”
(নাফিসা)_ “ গোয়া যাই চল”।
(মোহিনী )_ “ ওতো টাকা নেই মা,তুই আমার টাকা দিস,তাহলে যাব”।
(জেনি)_ “ তোর কোনদিন টাকা থাকে মণি ।লুকিয়ে বিয়ার খাবার সময় তোমার টাকা থাকে।এই বেলায় নেই” কথা শেষ না হতেই তার দিকে পাথর ছুড়ে ঢিল মারে মোহিনী ।
(দীপ্তশ্রী)_ “ তোরা থামবি!!! সবসময় ঝগড়া। এখন গোয়া যাবার পারমিশন হয়তো পাবনা বাট এক দুদিনের জন্য কাছেপিঠে কোথাও যাওয়া যায়”।
(জেনি)_ “ নট ব্যাড। চল যাই কোনো অ্যাডভেঞ্চারাস প্লেসে।আচ্ছা গ্রাম সাইড এ কখনো যাইনি। চলনা যাই “।
(নাফিসা)_ “ হুম,ভালো। আচ্ছা তনিমা তোদের তো গ্রামে বাড়ি আছে।চল ওখানেই যাই”।
(তনিমা)_ “ পাদল নাকি তোলা?? ওই বালিতে তেউ থাতেনা এথন।বালিল তাবি এথন বাবাল কাথে।থালি এতদন পাহালা দেয়।থবাই বলে অথানে ভূত থাতে”।
(মোহিনী )_ “ ওলে আমার তোতলু সোনারে।থাম তুই।কথা বলতে পারিসনা জ্ঞান দিচ্ছিস।শালা তুই টপ রেজাল্ট কিকরে করিসরে?? এনি ওয়ে।আমরা ওই গ্রামেই যাব। ভূতটুত বলে কিচ্ছু হয়না।বাড়ির চাবি নিয়ে কাল চলে আয় সকাল ১১টায়।প্রত্যেকে রেডি থাকবি।জেনি তুই চল এখন আমার সাথে।কিছু খাবার আর কয়েকটা বোতল কিনে নেই।তোর তো বাড়িতে কেউ নেই।আরামসে রাখতে পারবি।আমি সকালে তোদের সকলকে পিক করে নেবো।
(দীপ্তশ্রী)_ “ আমার জন্য এক প্যাকেট নেভিকাট নিয়ে রাখিস প্লিজ। আমি টাকা দিয়ে দেব”।
(মোহিনী) _ “ থাক মা।এই নিয়ে তোমার কাছ থেকে আমি ৪৯০ টাকা পাই সিগারেটের। এক পয়সাও হাতে পাইনি।তোমায় দিতে হবেনা।তুমি ফ্রি তেই টান দিও”।
(দীপ্তশ্রী)_ “ ওলে আমার কুচুপুচু।আমার সোনা।এর জন্যেই তো তোকে এতো ভালোবাসি”।
(মোহিনী)_ “ ভাগ শালি”

          যাই হোক পরদিন সকালে সকলেই রেডি।  বাবাকে বাঘের মতো ভয় পাওয়ায় তার থেকে গ্রামের বাড়ির চাবি চেয়ে নেওয়ার সাহস হয়নি।অগত্যা তা চুরি করে বাড়ি থেকে পরদিন রওনা হলো তনিমা। সোজা চলে গেল মোহিনীর বাড়ি | তারপর ও আর মোহিনী প্রত্যেককেই বাড়ি থেকে পিক করে নিল। নিজে ড্রাইভ করছে সে | বাবার কাছে অনেক জেদ করে গাড়ি নিয়ে এসেছে | শহর থেকে বীরপুর গ্রাম অনেকটাই দূর। ৬-৭ ঘন্টার যাত্রা।রাস্তা কেউই চিনতোনা।আশেপাশের লোকদের জিজ্ঞেস করতে করতে আর খানিকটা অনলাইন ম্যাপ দেখে যেতে থাকে তারা।কেউ গান শুনতে ব্যস্ত।কেউ সেল্ফি তুলতে ব্যস্ত,কেউ সুখটানে। পিচের রাস্তা ছেড়ে গ্রামের মাটির রাস্তায় ঢোকার বাঁকে এক বৃদ্ধ লোককে দেখে বাড়ির ঠিকানা জিজ্ঞেস করার জন্য মোহিনী ডাকল।ভদ্রলোকের গায়ে অতি গরমেও কালো চাদর মোড়ানো | দেখতেও কালো কুচকুচে, হাতে তার হ্যারিকেন। দেখে তাকে মনে হচ্ছিল যেন নির্ঘাত ভূত।তাকে রাস্তা জিজ্ঞেস করতেই তিনি কেমন যেন অদ্ভুত হেসে উঠলেন তারপর বললেন-
             কিছু দূর যেতেই মোহিনী দেখে একব্যক্তি হাত বাড়িয়ে তাদের থামতে বলছে।মোহিনী গাড়ি থামালে তিনি বলেন_

“ আসার আর দিনক্ষণ  পাইলেন না?? সাবধানে যায়েন। একটু পরে একখান পুকুর আছে।পাশে একখান বেলগাছ আসে।ওইখানে কিন্তু ভুলেও দাঁড়ায়েন না। ওইখানে তেনাদের বাস আর আইজকা অমাবস্যা।”। আবার সেই বিশ্রী হাসি |
মোহিনী কাঁপত স্বরে “ধন্যবাদ” বলেই স্টিয়ারিং-এ হাত রাখল |
         এই ভর সন্ধ্যায়  ভুতুড়ে লোকটার কথায় ওরা একটু ভয় পেয়েছিলো। দীপ্তশ্রী জেনিকে বলে_
“ হ্যাঁরে জেনি,ভূতের সাথে সাক্ষাত হবে নাতো???”
(জেনি)_ “ আর ইউ ম্যাড দীপি??? কোন যুগে বসবাস করছিস তুই?? ভূতঠূত বলে কিছু হয়না”।

“ শহর থেকে এসেছেন নাকি??”
(মোহিনী )_ “কেনো বলুন তো??”
“ দিদিমণি এর আগে তো এই বড় গাড়ি যাবে না।কিছুটা পথ গেলে আলের  উপর দিয়ে যেতে হবে।গ্রামে ওই রাস্তা দিয়েই চলাচল করতে হয়।আপনারা আসুন।কোথায় যাবেন আপনারা??”
(তনিমা)_ “ ভত্তাতাদ্য নিবাথ”।
(নাফিসা)_ “ চুপ তোতলা। আসলে আমরা অম্লান ভট্টাচার্যির বাড়ি যাব”।
“ ও,আমার বাড়িতো ওখানেই।চলুন চলুন”।
(নাফিসা)_ “গাড়িটা”??
“ কিচ্ছু হবেনা দিদিমণি ।এখানে চোরছেঁচড় নেই”।
 ভদ্রলোকের কথা ভেবে সবাই রাজি হয়ে গাড়ি থেকে নামলো।প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে রওনা হলো তারা সেই বাড়ির দিকে।
(দীপ্তশ্রী)_ “ আচ্ছা দাদা,গ্রামে ঘোরার জায়গা কি কি আছে??”
“ দিদিমণি, এটা কি বড় শহর বলুন।ছোট্ট গ্রাম।তবে মাছে ভরা পুকুর আছে,ধান ভরা জমি আছে।আপনাদের শহরের থেকে এই গ্রাম অনেক ভালো দিদিমণি। ঘুরে দেখবেন ভালো লাগবে।
(মোহিনী) _“ আচ্ছা বেশ”।
 “ আপনারা কি ওই বাড়িতে থাকবেন???”
(নাফিসা)_ “ হ্যাঁ,কেন বলুন তো??”
“ আজ্ঞে কিছুনা।সাবধানে থাকবেন।ওই বাড়িতে তো কেউ থাকেনা এখন।অনেকদিন ধরে পড়ে আছে।পোকামাকড় থাকতে পারে।বিপদাপদ কি আর বলে আসে!!”
(মোহিনী) _ “ হ্যাঁ আপনি ভাববেন না।আমরা দরকারি সব নিয়ে এসেছি”। কথা বলতে বলতে লোকটির বাড়ির সামনে এসে তারা উপস্থিত হলো”।
“ আপনারা একটু দাঁড়ান।আমি কিছু জিনিস এনে দিচ্ছি নিয়ে যান। অনেক রাত হয়েছে।খাবার আছে তো??”
(জেনি)_ “ খাবার রান্না করা নেই।তবে আমরা নিয়ে এসেছি সব।ওখানে তো উনুন আছেই।তনিমা জানে উনুনে রান্না করতে। ওখানে রান্না করে খেয়ে নেবো।আপনি কিছু বাসনের বব্যবস্থা করেদিন”।
“ রান্নাটা না করাই ভালো হবে।আপনারা খেয়ে যান না আমার বাড়ি থেকে”।
(তনিমা)_ “ না না,আমলা পালবো।আপনাদেল আর কত্ত কত্তে হবেনা”।
     লোকটি ঘর থেকে চারটা মশাল, একটা লোহার রড,বাসন এনে তাদের দিলেন।
(দীপ্তশ্রী)_ “ এমা,এসব কেন?? এগুলো দিয়ে কি করবো??”
“ নিয়ে যান কাজে লাগবে।আর ওই বাড়িতে জল নেই।আপনারা যান আমি জল দিয়ে আসছি খাবার আর রান্না করার”।
(মোহিনী) _ “ আপনাকে অনেক ধন্যবাদ দাদা”।
   বলে সেখান থেকে চলে যায় তারা।বাড়ির তালা খুলে ঢুকতেই কেমন একটা গা ছমছমে পরিবেশ।  মাটির ঘর,খড়ের চাল,বিদ্যুৎহীন বাড়ি। চারিদিকে ধুলো বালি আর মাকড়শারজাল।
(দীপ্তশ্রী)_ “ হ্যাঁরে মণি, এখানে থাকাটা কি ঠিক হবে??”
(মোহিনী) _ “ কেনো ঠিক হবেনা?? ভয় পাচ্ছিস কেনো।সবাই মিলে হাত লাগিয়ে পরিষ্কার করলেই চারদিক সাফ হয়ে যাবে। চল সবাই হাত লাগা। ৭ টা বাজে ।লেট করলে অনেক রাত হয়ে যাবে শুতে শুতে।নাফিসা এক কাজ করতো, বাড়িতে একটা কল করে বল যে আমরা পৌঁছে গেছি।
(নাফিসা)_ “ হ্যাঁ  করছি দাড়া।………. এমা,মনি একদম নেটওয়ার্ক নেইরে।একেবারে নো সার্ভিস। এই তোরা দেখতো তোদের কারোর আছে নাকি নেটওয়ার্ক”।
(তনিমা)_ “ তোলা থত্যিই পাদল।এই গ্লামে নেতওয়াল্ক থাদবে??”
(দীপ্তশ্রী)_ “ তাও ঠিক।তোতলু এই প্রথম একটা বুদ্ধির কথা বলল।নেটওয়ার্ক নেই নেট চালাবো কি দিয়ে রে”?
(মোহিনী) _ “ একদিন ফেসবুক না করলে মরে যাবিনা ***”
(দীপ্তশ্রী)_ “ দেখ মনি গালি দিবিনা একদম”।
      হাসিঠাট্টা শেষ করে সবাই কাজে লেগে পরলো।ঘরদোর রান্না ঘর পরিষ্কার করে সবাই ফ্রেস হয়ে নিলো। পাশের ওই ব্যক্তি তাদের জন্য খাবার জল হাতমুখ ধোবার জল দিয়ে গিয়েছিলো। ফ্রেস হয়ে রান্নায় লেগে পরলো সবাই।
(নাফিসা)_ “ বাড়িটা পরিষ্কার করলাম।তাও কেমন যেন একটা লাগছে”।
(মোহিনী) _ “ শুরু হলো ম্যাডামের জাসুসিগিরি।এই দীপি ওই ঘর থেকে জলের বালতিটা নিয়ে আয়তো”।
       দীপ্তশ্রী জল আনতে যায় পাশের ঘরে।বালতি হাতে তুলি রান্নাঘরে আসার জন্য ঘুরতেই তার মনে হলো কেউ যেন তার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে।ভয়ে বুকটা কেঁপে উঠেছিলো তার।পেছন ঘুরতেই দেখলো কেউ নেই।
(দীপ্তশ্রী)_ “ ওই, শোন না।ওই ঘরে মনে হলো কেউ মনে হয় পেছনে দাঁড়িয়ে আছে”।
দীপ্তশ্রীর কথা শুনে নাফিসা আর তনিমা ভয় পেয়েগিয়েছিল।
(মোহিনী) _ “ উফ্, তুই থামবি দীপি”।
         রান্না শেষ করে প্রত্যেকেই খাওয়াদাওয়া করে নিলো। পাঁচ জনের মধ্যে মোহিনী আর দীপ্তশ্রী শুধু নেশাখোর ছিল।খাবার শেষ করে বোতল আর সিগারেট জ্বালিয়ে বসলো দুজনে।বাকি তিনজন শোবার বন্দবস্ত করতে লাগলো। কিছুক্ষন পর হঠাৎ আওয়াজ হতে লাগলো খচখচ খচখচ। হাসাহাসি থামিয়ে প্রত্যেকেই নিস্তব্ধ।ভেতরে ভয়।
(জেনি)_ “ মণি, আওয়াজটা কোন দিক থেকে আসছেরে??”
(মোহিনী) _ “ মনে তো হচ্ছে বাইরে থেকে।চলতো দেখি।দাঁড়া,টর্চটা নেই।তুই ডান্ডাটা নে”।
(জেনি)_ “ চল”
    বাইরে বেরতেই দেখলো,তাদের দরজার বাইরে ঝোপের মধ্যে কিছু রয়েছে।মণি টর্চ জ্বালতেই_
(মনি)_ “ ওমা,এতো শেয়াল।চল ঘরে”।
     এসে যে যার মতো শুয়ে পরলো।প্রত্যেকেই টায়ার্ড, দীপ্তশ্রী নাফিসা জেনি তনিমা ঘুমিয়ে কাদা।ঘুম আসছিলো না মনির।এপাশ ওপাশ করছিলো সে অনবরত ।হঠাৎ পাশে ঘুরতেই দেখে কে যেন তার পাশে বসে আছে।চিৎকার করে ওঠে মণি। হুরমুর করে সবাই উঠে পরে।
(জেনি) কি হলোরে মনি?? চিৎকার করে উঠলি যে???
(মণি)  “ ওপাশে ঘুরতেই দেখি একজন আমার পাশে বসে আছে”।
(জেনি) “ মাল বেশি খেয়েফেলেছিস।বাট তখন দীপি কাওকে দেখেছে এখন তুই।ব্যাপারটা পুরোটা হাল্কা ভাবে নেবার মতোনা।এক কাজ কর, তুই দীপী,তনিমা ঘুমো। আমি আর নাফিসা পাহারা দিচ্ছি”।
       কথামতো তিনজন শুয়ে পরলো।নাফিসা আর জেনি বসে গল্প করছিলো। কিছুক্ষণ পর রান্নাঘর থেকে বাসনকোসন এর আওয়াজ। মনেহচ্ছিল কেউ রান্না করছে।একা যাবার সাহস পায়না নাফিসা আর জেনি।বাকি তিনজন কে ডেকে তোলে।তারপর মশাল জ্বালিয়ে লোহার রডটা হাতে নিয়ে এগোতে থাকে তারা।রান্নাঘরে ঢুকতেই দেখে সেখানে কেউ নেই।এদিকওদিক ভালোমতো দেখে নেয় প্রত্যেকে।তারপর ঘরে আসতেই তারা দেখে প্রত্যেকের জিনিসপত্র এদিকওদিক ছড়িয়ে আছে।যেন কেউ ইচ্ছে করে সব এদিকওদিক ছুড়ে ফেলেছে।তাদের শোবার জায়গার পাশে পরে রয়েছে টাটকা রক্ত।
(নাফিসা)_ “কিরে মনি তোর হাতে রক্ত কোত্থেকে লাগলো?? কেটেছে নাকি??
(মোহিনী)_ “ না তো,কাটলে তো বুঝতাম। তাছাড়া জ্বালাও তো করছেনা”।
          বুঝতে অসুবিধে হয়না আর কারোর।জিনিসপত্র সব ফেলে পাঁচজন মিলে দৌড়।দীপি তাও সিগারেটের প্যাকেট আনার জন্য ঘুরে তাকালে তার চোখে পরে রক্তাক্ত এক দেহ যাতে অজস্র কোপানো | ঝুলে থাকা মাংস আর ঠিকরে বেরোনো চোখ নিয়ে অদ্ভুত আওয়াজ করে হামাগুড়ি দিয়ে ওদের দিকা এগোচ্ছে | এই দৃশ্য দেখে দীপি চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে যায় | বাকিরা ওকে তুলেই  দৌড়ে তারা সেই ভদ্র লোকের বাড়ি গিয়ে দরজা ধাক্কাতে থাকে জোড়েজোড়ে।দরজা খুলতেই_
(মণি) _ “ বাঁচান,বাঁচান আমাদের দাদা।ওই…… ওই ঘরে ভূ…..” বলতে না বলতেই অজ্ঞান মোহিনী।
   ভদ্রলোক আর তার স্ত্রী তাদের ঘরে নিয়ে গিয়ে বসায়।জল দেয়।মোহিনীর ও দীপির চোখেমুখে জল ছিটিয়ে তার জ্ঞান ফিরিয়ে আনেন।কিছুক্ষন পর নিজেদের সামলে নেয় তারা।
(জেনি)_ “ আপনারা জানেন না,ওই বাড়িতে যে ভূত আছে???”
“ আজ্ঞে জানতাম দিদিমণি, কিন্ত আপনারা শহর থেকে এসেছেন।বড় ঘরের মেয়ে।আমাদের অশিক্ষিতদের কথা কি শুনতেন??? হেসেই উড়িয়ে দিতেন”।
(তনিমা)_ “ তিন্তু ওতাতো আমাদেল বালি ছিল।ভূত এলো তোত্থেতে??”
“ ও,তুমি ভট্টাচার্য বাড়ির মেয়ে।নারায়ণ ভট্টাচার্য তোমার বাবা তাইনা??”
(তনিমা)_ “হ্যাঁ”
“ তোমার বাবা শহরে চলে যাবার পর ওখানে তোমার কাকু আর কাকিমা থাকতো। খুব ভালো ছিল তোমার কাকু কাকিমা।কিন্তু এক দালালের সাথে ঝগড়া হয় তোমার কাকুর একদিন।ওই দালাল তোমাদের বাড়িতেই তোমার কাকুকে আর কাকিমাকে কুপিয়ে খুন করে। তোমার বাবা মা তো জানতো সব।তুমি জানোনা??? জেনেশুনে ওনারা এই বাড়িতে তোমাদের আসতে দিলেন???তার মধ্যে আজ অমাবস্যা।”
(নাফিসা)_ “ আসলে আমরা না জানিয়ে এসেছি।বাড়ির চাবিটাও চুরি করা”।
“ এ যাত্রায় বেঁচে গেলে মা।এই ভুল আর কোনোদিন করোনা।আজ থাকো এখানে,সকাল হলে চারটে খেয়ে চলে যেও”।
     বাকি রাতটুকু ওই ভদ্রলোকের বাড়িতে কাটিয়ে দেয় তারা।কিন্তু ভয়ে রাতে ঘুম কারোর হয়নি।পরদিন সকালে ফ্রেস হয়ে অল্প খাবার মুখে পুরে রওনা হয় তারা।ওদের জিনিসপত্র সকাল বেলায় ভদ্রলোক কিছু ছেলেদের দিয়ে ওই বাড়ি থেকে আনিয়ে দেয়।তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রওনা হয় তারা বাড়ির দিকে।বাড়ি ফিরে প্রত্যেকে সব ঘটনা জানায়।শুনে সবার আত্মা উড়ে যায়। তনিমার বাবা রাগ করলেও সুস্থ মেয়ে ফিরে আসায় সে যাত্রায় বেঁচে যায় সে।জেনি একা থাকতো নিজের বাড়িতে।কিন্তু আর সাহস পায়না সে।মোহিনীর সাথে তাদের বাড়িতে থাকতে শুরু করলো জেনি।অমাবস্যার এক রাত তাদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকলো।
     
                 এর একবছর পর ওরা পাঁচজন আর নারায়ণবাবু ঐ বাড়ি গিয়ে ভালোভাবে যজ্ঞ করে তনিমার কাকু কাকিমার আত্মাকে মুক্তি দেন |          
                      

-সায়নী সরখেল

Comments

Popular posts from this blog

Prem Mane Ato Kichhu by TIRTHARAJ BHATTACHARJEE

বাস্তব by TIRTHARAJ BHATTACHARJEE

মেঘলা by TIRTHARAJ BHATTACHARJEE