‌‌ঋণ by Sayani Sarkhel



“কোথায় আছিস মা???”
“কাজে আছি??কিছু বলবে???”
“সাড়ে ৯ টা বাজলো। তোর কাজ এখনো শেষ হয়নি??আর কতো রাত করবি??”
“ ফিরতে দেড়ি হবে আজ মা।চিন্তা করোনা।রাখছি”। বিরক্ত হয়ে ফোন রেখেদিল বৃষ্টি।
    বিরক্তির কারণ???  তার তো কোনো কাজ নেই আজ।প্রত্যেক শনিবারের মতো আজও হাফ অফিস। আচ্ছা তার মায়ের কি একবারও এই কথাটি মাথায় আসেনি?? যে আজ শনিবার??? সকালে মেয়ে কিছু মুখে না দিয়েই বেরহয়ে গেছে সেই দৃশ্য তার চোখতো এড়ায়নি।
         গতকাল রাত ২ টোয় একটা ফোন কেনো এতো ভেঙে দিয়েছিলো এই ডেঁপো মেয়েটাকে??? ভাঙার কারণ তার প্রিয়তমএর বিবাহের খবর।যার সাথে সাত জন্ম একসাথে থাকার স্বপ্ন দেখা।যার সাথে সুখদুঃখ আনন্দ বেদনা সবটায় একসাথে পথচলার স্বপ্ন দেখা। নিজের প্রত্যেকটা সকাল দুপুর রাত যার নামে লিখে দেওয়া।যার বাগানে নিজেকে সে মাধবীলতা হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিল, নিজের শাখাপ্রশাখা বেষ্টন করে বাগান ভরিয়ে দিতে চেয়েছিল, সেই প্রিয়তমের আজ বিয়ে।মন ভেঙে যাওয়াটাকি এব্যাপারে খুব অস্বাভাবিক???
        নদীর পাড়ে বসে নদীর তীব্র পাকচক্রের দিকে চেয়ে জীবনের স্রোতে বয়ে যাওয়া দিন গুলোর সম্পর্কে ভাবছিল সে।হঠাৎ কি হলো???? চোখের জল কেনো রাগে পরিণত হলো তার???? কি ভাবছে সে???
     বাইরে চোখদুটো রক্তবর্ণ হয়ে থাকলেও ভেতরে আত্মার চখ দুটো নদীর স্রোতের মতো ভাসছে। কি দোষ ছিল তার?? কেন এই বিশ্বাসঘাতকতা??? সে মধ্যবিত্ত ঘরের শ্যামবর্ণা মেয়ে তাই??? নাকি আধুনিকতার কামজগতে  ভাসিয়ে দেয়নি নিজেকে সে,তাই???? নিজের দোষটাও তো তার অজানা।ভুলটাও অজানা।জানলে হয়তো শুধরে নেবার চেষ্টা করতো। অজস্র প্রশ্ন,জিজ্ঞাসা মনের ভেতর আগুনের মতো জ্বলে যাচ্ছে। শেষ অবধি সিদ্ধান্ত,  “ মৃত্যু”। কার?? বৃষ্টি?? না তার প্রিয়তমর।
            নদীর পাড় থেকে উঠে রওনা হলো বৃষ্টি।কোথায় যাচ্ছে সে??? জানা নেই। চলতে চলতে এসে দাঁড়ালো শহরের নামকরা স্থানে।ভেতরে ঢুকতেই চোখে পরল অনেক নারী। যাদের কাজঘর সব এখানেই।বৃষ্টির দিকে তারাও হা করে চেয়েছিল।কেননা কোনো ভদ্রঘরের মেয়েকে আজ অবধি তারা এখানে দেখেনি।
“কে রে তুই?? এখানে কি করছিস??”
“আমি বৃষ্টি”।
“এখানে কি করতে এসেছিস?? বলি ধান্দা কি?? এখন নতুন কাওকে আমি নেবনা।ফোট এখান থেকে।শালা পেটে লাথি মারতে এসেছিস”
“আপনার পেটে লাথি কেনো মারতে যাব দিদি”??
“তা না তো কি বে??? রাত দশটায় এখানে ফ্যসান দেখাতে এসচো??”
“আপনার সাথে একটু কথা বলবো। সময় দেবেন??”
“জালাস না তো।ভাগ।আমার সাতে কি কথা বলবি তুই?? কাস্টমার আসার টাইম হয়ে এসছে।যা”।
“ বেশিক্ষণ না।পনেরো মিনিট দিলেই হবে”।
“আহ্। মহা জালা দেখছি।আয় ঘরে……
বোস। বল কি বলবি”??
“আপনাদের থেকে একটু সাহস ধার দেবেন আমায়???”
সিগারেট জ্বালতে জ্বালতে হা হা করে হেসে উঠলো সেই দিদি”।
“সাহস নিতে এখানে এসছিস??? বলি কি এমন মহাভারত শুদ্ধ করবি যে তুই সাহস নিতে এসচিস,তাও আবার আমাদের কাছ থেকে??”
“খুন করবো”
“খুন করবি???? কাকে???” আবার সেই হাসি।
“আমার অতীতকে”।
“ লাভকেস।বুঝলাম……. তো হারামজাদি খুন কিসের জন্য করবি।ধোকা খেয়েচিস তাই”???
“তোমাদের কাছে আসলাম কেন জানো???  এখানে তোমাদের লজ্জা,ঘৃনা,ভয়,সংশয়  কিচ্ছু নেই।শুধু মাত্র সাহস আর দায়বদ্ধতা নিয়ে দিনের পর দিন এখানে আছো। আমি কোনো লজ্জা ভয় সংশয় নিয়ে আসিনি।সাহস নেই গো আমার।মানুষটাকে খুন করব এই কথাটা যতবার মন বলেছে ভেতরটা কেঁপে উঠেছে ততবার।কিন্তু জ্বালাটাও সহ্য করতে পারছিনা।মরে গিয়ে শান্তি পাব সেই রাস্তাও তো আমার নেই।পিছুটান আমার মা,তার যে আমি ছাড়া কেউ নেই………
“থাম মাগী থাম।সব বুঝেছি আর কান পাকাস না।বলি এতো যন্ত্রণা তোর??? এক শুয়োরের বাচ্চা ভালোবাসলনা বিয়ে করলো না বলে তুই শেষ হয়ে গেলি???  শালি জন্মের সময় তোর তুই কুত্তা তোকে ভালোবাসতো???  না তোর বাপ মা??? খুন করবি বলছিস,জেলে গেলে তোর মার কি হবে ভেবেছিস একবারো মুখপুড়ি???”
“নিজের কি ভুল জানিনা।কি দোষ আমার জানিনা।আমি কালো এটাই আমার দোষ নাকি আবদার না মেটানটা দোষ। আজকে বিয়ে করে নিচ্ছে। একটা বারও আমি জানতে পারলাম না আমার কি অপরাধ”।
“তোর অপরাধ তুই মেয়ে মানুষ। করুক না বিয়ে।তোর কি বে??? যে তোর কথা ভাবলোনা তুই কেন ভাবছিস?? এই প্রেম করার সময় ভাবতিস না কিচ্ছু??? বিয়ে করার স্বপ্ন দেখিসনি একসাথে??? বাচ্চা পয়দা করার আগে নাম ঠিক করে রাখিসনি??? সব তো একসাথে করেছিলিস তখন।এখন তুই একা কেন ভাববি?? গান্ডুমাগী নিজের মার কথা ভাব।তাকে ভালো রাখ।শালা দুনিয়ায় ছোকরার অভাব নেই। অনেক আছে অনেক।অনেক ভালো মাল পাবি।ওইসব না ভেবে ভুলে যা। ভাব তুই পচা পাগারে পরে গিয়েছিলিস।ভগবান উঠিয়ে দিয়েছে।তোর বাড়িতে মা আছে তার জন্য ভাব।নে সিগারেটটা নে।টানতে টানতে বাড়ি চলে যা। আর শোন যদি ওইসব খুনখারাবি সুইসাইড করিস।বুঝেনিব জন্মের পরে মার বুকের দুধ খাসনি”।
“ ভেবনাগো দিদি।আর করবোনা ওসব।চিন্তায় ওসব ঘুরছিল মাথায়।তাই তোমার কাছে এসে মন হাল্কা করে গেলাম। চলি দিদি। ভালো থেকো”।
“আচ্ছা শোন!! তুই এখানে কেন এলি??? তাও এতো রাতে।বন্ধুবান্ধব আত্মীয় কেউ নেই তোর মন হালকা করে দেওয়ার??”
“ওরা যদি পারতো তাহলে তো যেতামই”।
“আমি পারবো তা কি করে জানলি??”
“জীবনের সবচেয়ে প্রতিকূল সময় দিয়েতো তুমি গেছো দিদি।ওরজন্যই তো নিজের সব বিসর্জন দিয়ে এই কাজ করছ।তা দিয়ে মা এর চিকিৎসা করছো।বোনকে স্কুলে পড়াচ্ছ। আবার রাস্তার ভিখিরিদেরও খাওয়াচ্ছ”।।।
“তুই এতো কিছু কোত্থেকে জানলি??”
“ওষুধ নিতে আমাদের দোকেনেই যাও। যেই দোকানীর কাছে দুখের কথা বলেছিলে তিনি আমার মা। এরপর থেকে ওষুধ আনতে গেলে টাকা নিয়ে যেওনা দিদি।তোমার এই বোন কষ্ট পাবে।ধরে নিও এক মায়ের জন্য তার এই মেয়ে ওষুধ দিচ্ছে। চলি দিদি”।
     

-সায়নী সরখেল


Comments

Popular posts from this blog

Prem Mane Ato Kichhu by TIRTHARAJ BHATTACHARJEE

বাস্তব by TIRTHARAJ BHATTACHARJEE

মেঘলা by TIRTHARAJ BHATTACHARJEE