ইনকাম
"মৃণ্ময়ী কাল রাস্তায় তোকে একটা ছেলের সাথে দেখলাম কে সে?"
বাবার থেকে এরকম প্রশ্ন শুনে হকচকিয়ে যায় সে। একটু সামলে নিয়ে নিজেকে মৃণ্ময়ী আদুরে গলায় বলে ওঠে "বাপি, ও হল শৌভিক। ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। ও পথশিশুদের সাহায্য করে টুকটাক টিউশন পড়িয়ে।"
- "
আচ্ছা কাল তোমার মনের মানুষটিকে লাঞ্চে ডাকো বাড়িতে।" হেসে বলে ওঠেন মনোজ বাবু।
- "
আমার সুইট বাবা।" বাবাকে খুশিতে জড়িয়ে ধরে মৃণ্ময়ী।
-"
আর হ্যাঁ ওনার পছন্দের ডিশ শুনে নিস।" পেছন থেকে হাসিমুখে বলে ওঠে অনুপমা দেবী মানে মৃণ্ময়ীর মা।
পরদিন সকাল থেকেই অপেক্ষা শুরু‌ হয় শৌভিকের জন্য। বেলা একটায় কলিংবেল বাজতেই একছুট্টে দরজা খুলে শৌভিকের হাত ধরে টানতে টানতে সোফায় এনে বসিয়েই "বাপি, মামমাম তোমরা কোথায়?" করে চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় তুলে নেয় মৃণ্ময়ী।
অনুপমা দেবী ব্যস্ত রান্নাঘরে। তাই গিন্নিকে ছাড়া একা চলে আসেন মনোজ বাবু।
"
কেমন আছো শৌভিক?"
- "
ভালো কাকু। আপনি?"
- "
ভালো"
-"
চাকরি-বাকরি নিয়ে কী ভাবছো?"
- "
করবনা চাকরি।"
- "
কেন! বিয়ের পর ব‌উ-বাচ্চাকে কী খাওয়াবে!"
- "
যা আমি খাব তাই খাওয়াবো। টুকটাক টিউশন‌ পড়িয়ে পথশিশুদের সাহায্য করিয়ে যা বাঁচে সেটা দিয়েই চলে‌ যাবে নিজেদের।"
- "
মৃণ্ময়ী, কী বলছে ও! একে তুই বিয়ে.... ধ্বংস হয়ে যাবি মা। এই ছোকরা তোমার ইনকাম কী?"
- "
ইনকাম, ইনকাম ওইসব বাচ্চাগুলোর হাসিমুখ আর ভালোবাসা। চাকরি ঠিক জুটে যাবে কাকু কিন্তু ইনকাম কী ঠিকঠাক হয় আমাদের? টাকা ইনকাম‌ই লক্ষ্য নয় আমার। ওইসব পথশিশুদের জন্য একটা স্কুল করার জন্য চাকরি একটা দরকার। সেটা আর বেশীদূরে নয়। কারণ আমার তৈরী করা একটা প্রজেক্ট একটা কোম্পানীতে পাঠিয়েছি। তারা আগামীমাসেই জয়েনিং লেটার পাঠাবে। আর হ্যাঁ কাকু , মৃণ্ময়ীকে স্ত্রী হিসেবে পেলে তাকে ভালো রাখার জন্য আমি অবশ্য‌ই খাটব। কিন্তু টাকা ইনকামের মেশিন ভাববেন না আমায়। সবাই ইনকাম চায়, কিন্তু কেউ কেউ ইনকাম হিসেবে শুধু টাকা চায়না। উঠি কাকু।" বেড়িয়ে যায় শৌভিক।
নীরবতার মাঝে পেছন থেকে হঠাৎ মায়ের একটাই কথা কানে এল মৃণ্ময়ীর - "মা, সঠিক ছেলে পেয়েছিস।"


- তীর্থরাজ ভট্টাচার্য্য

Comments

Popular posts from this blog

Prem Mane Ato Kichhu by TIRTHARAJ BHATTACHARJEE

বাস্তব by TIRTHARAJ BHATTACHARJEE

মেঘলা by TIRTHARAJ BHATTACHARJEE