শ্রীময়ী by SAYANI SARKHEL


ব্যস্ত রেলস্টেশন, শতলোকের মাঝ দিয়ে ছুটে বেরিয়ে আসছিলো শ্রীময়ী না না, কেউ তাড়া করেনিচেন্নাই থেকে কাজ সেরে ফিরছিল সে,অফিস ধরবার সুবাদে তার এই ছোটাছুটিপিঠে ব্যগ,কানে ফোন,হাতে ফাইলস্টেশন থেকে বের হয়ে ট্যাক্সি ধরে অফিসের দিকে রওনা হলো সেপুরো রাস্তা সে ফোনেই ব্যস্ত ছিল,এতোটাই ব্যস্ত যে নামার পর টাকা দিতে ভুলে যাচ্ছিল
            এক নামি কোম্পানিতে সেলস ডিপার্টমেন্টএ হেড ছিল সেতাই কাজের দায়িত্ব তার সবার থেকে একটু বেশিই ছিলঅফিসের বস তাকে অন্ধের মতোই বিশ্বাস করতোকেননা কাজের প্রতি শ্রীময়ী ছিল খুবই সিন্সিয়রনিজের দায়িত্ব সে ভালোমতোই পালন করতো
                 অফিসে ঢুকে ব্যাগ ফাইল সব রেখে কিছুক্ষণ নিজের চেয়ারে হেলে বিশ্রাম নিয়েই সে ছুটলো বসের ঘরে
-মে আই কাম ইন ম্যাম!
-আরে শ্রী তুমি!! তুমি অফিস কেনো এলে? তোমায় তো ছুটি দিয়েছিলাম আজ
-না ম্যাম, ট্রেন ঠিক টাইমেই ঢুকে গেছেবাড়ি গিয়ে একা একা সারাদিন সময় কাটবেনাতাই চলে এলাম আর কি
শ্রীময়ীর কথা শুনে খারুস বস ম্যাডাম হেসে উঠলেন
-ঠিকাছে শ্রী, বলো তোমার কাজ কেমন হলো??
_ ভালো ম্যাম, চেন্নাই এর কোম্পানি আমাদের এগ্রিমেন্ট রাজি হয়েছেন আগামী ২৩ তারিখ ওনারা আসবেন
_ওউ, দ্যাটস্ গ্রেট থ্যাংকস টু ইউ মাই ডিয়ারতুমি ছাড়া এই কাজ কেউ পারতো নাগত দুবছর ওনারা এই এগ্রিমেন্ট ফিরিয়ে দিয়েছেনএবার তুমিই রাজি করালেথ্যাংকস এগেইন তবে তোমার আজ ফুল ডিউটি করতে হবেনাহাফ টাইমে বাড়ি চলে যেওনা এক কাজ করো,তুমি চলো আমার সাথেএকসাথে লাঞ্চ করে দেন তুমি বাড়ি যেও
_ম্যাম বলছিলাম যে আজ হয়তো লাঞ্চটা একসাথে হবেনাবেরহয়ে ফ্রেন্ড এর বাড়ি যাব ভাবছিলামবাট নেক্সট ডে লাঞ্চ কিন্ত আমার বাড়িতে অ্যান্ড আপনাকে আসতেই হবে
_ওকে শ্রী, যাব

 ম্যামের সাথে কথা শেষ করে অফিসের কাজ সেরে বাড়ির পথে রওনা হলো শ্রী ফ্ল্যাটে সে একাই থাকতোবাবা মা থাকতেন মালদাতে কাজের সুবাদেই সে কোলকাতায় থাকতোবাড়ি এসে স্নান সেরে ঘরে আসতেই ফোন অনিমার-
_কোথায় তুই??
_স্নান করলামযাচ্ছি এক্ষুনি তুই রেডি তো??
_ আমার বেশি সময় লাগবেনা তুই আয়তো তাড়াতাড়ি
        ফোন রেখে রেডি হয়ে বেড়িয়ে পরলো শ্রীঅনিমার সাথে একটু বেড়াতে যাবার প্ল্যান  আর খাওয়াদাওয়াঘুরেফিরে বিকেলে এক রেস্তোরায় এসে বসলো তারা দুজনে কিছুক্ষন কথা বলতে বলতেই ফোন বেজে উঠলো শ্রীর ওপার থেকে মৌ এর গলা
_কেমন আছো বউমণি???
_ভালো আছিরে বাবু তুই কেমন আছিস??
_আছি ভালো চলে যাচ্ছেকবে এলে চেন্নাই থেকে??
_আজই এসেছিরে তোর পড়া কেমন চলছে? পরীক্ষা কবে?
_ নেক্সট উইক
        এটুক বলে কিছুক্ষণ উভয় পক্ষই চুপ
_বউমণি, দাদার কথা জিজ্ঞেস করলে নাতো!!
_কি জিজ্ঞেস করবো!! ভালোই তো আছে তোর দাদাতা নতুন করে তুই আর কি বলবি
_ তা ঠিকই বলেছো দাদা আবার বিয়ে করছে শুনেছো????
     কথাটা শুনতেই শ্রী মাথায় বাজ পরলো
_কি বললি?? অনুপ বিয়ে করছে আবার?? নিশ্চই তোর মা এর কথায়??
  ওপারের কোনো উত্তর না শুনেই রাগে ফোন রেখে দেয় শ্রী
অনিমা এতক্ষণ বসে ফোনালাপ শুনছিলবুঝতে পারলো সবই কেননা সে শ্রীর ব্যাপারে সব জানতো
_শুধু শুধু রাগ করছিসভুলা যা না সবকি হবে এসব ভেবে??
_কি করে ভুলি বল তুই?? খালি প্রেম নয়তোসংসার করেছি সংসারকি ভুল ছিলো আমার পিতু বল তুই? একটা বাচ্চা দিতে পারিনি এটাইতো?আমি কি ইচ্ছে করে..আমার কি মা হতে ইচ্ছে হয়না?? আচ্ছা  আদিম মানুষ কি আমরা?? এখন তো কতো ট্রিটমেন্ট রয়েছেবলেও তো ছিলাম অনুপকে ওর এক কথা,না মা রাগ করবে মা রাগ করবে আরে বাচ্চাটা আমার আর ওর,মা রাগ করবে ব্লাডি****।।।
_থাম তো,ওসব ছাড়আচ্ছা শ্রী শুভর কি খবর রে??? ফোন ঠোন করে তোকে??
_হুম্, চেন্নাইএ ছিলাম যখন করেছিল ফোনকেমন আছি না আছি, খেয়েছি নাকি ঘুমিয়েছি নাকি এসবই বলছিল ওভার পসেসিভ
_তুমি যাই বলো সোনা, কিন্তু তোমায় ভালোবাসেনাহলে বিয়ে না করে বসে আছে কেন?? আমাদের ব্যাচ এর সবারই তো প্রায় বিয়ে হয়ে গেছেছেলেদের মধ্যে শুধু শুভই ব্যাচেলরতোর জ্বর হলে ওষুধ দিয়ে আসে,ঠিক আছিস নাকি খোঁজ নেয়,মাঝে মাঝেতো নিজে হাতে রান্না করেও দিয়ে আসে ছেলেটা ভালো কিন্তু শ্রী, ভেবে দেখিস
_ফাজলামো মারিসনা পিতু ওর হয়তো কোনো মেয়ে পছন্দ হচ্ছেনা বা মনমতো পাচ্ছেনা মেয়ে তাই….. ছাড়তো আমার কিন্তু ভালো লাগছেনা বাড়ি চল
_হুম্ চল
       রেস্তোরা থেকে বেড় হয়ে রওনা হলো বাড়ির পথে মন তার চঞ্চল হয়েছিলনিজেই গাড়ি চালাচ্ছিল শ্রী অনিমার কোনো কথা তার কানে ঢুকছিলনা,এক মনে সে নিজের ভালোবাসার দিন বিয়ের দিন গুলো ভাবছিল
                 অনুপের সাথে দুবছর আগে বিয়ে হয় শ্রীময়ীরশ্রীর বাপের বাড়ির অবস্থা খুব একটা ছিলনাবাবা সামান্য ব্যবসায়ী ছিলেনবিষয়আশয় বলতে কিছু জমি ছিলতা বেচে বেচেই তিনি মেয়েকে পড়াশুনো করিয়েছিলেনছেলে কাজের সুবাদে বাইরে গিয়েছিলকিন্তু গুণধর ছেলে সেখানেই বিয়ে করে ঘরজামাই হয়ে বসেতাই ছেলেকে কম গুরুত্ব দিয়ে মেয়ের স্বপ্ন তারা পুরোন করেনবাবা মা এর কষ্টের দামটাও শ্রী ঠিক দিয়েছিলোপড়া কমপ্লিট করে কয়েকমাসের মধ্যেই চাকরি পেয়ে যায় সেঅনুপের সাথে ইউনিভারসিটিতে পরিচয়, তারপর বন্ধুত্ব, পরিণতি প্রেমমেয়ের পছন্দের ছেলের সাথেই বিয়ে দিয়েদেয় তার বাবাসংসার প্রথম প্রথম ভালোই ছিলশাশুড়ি মা বউমার চাকরি করা বিষয়টা খুব একটা পছন্দ করতোনাপ্রথমে কিছু না বললেও পরে মিষ্টি মুখে শ্রী কে এই নিয়ে জুতোর বারি দিতেনঅশান্তি প্রথমে এই নিয়েই হতো, পরে আগুনে ঘি পরে একবছর যেতেই যখন বংশধর আসার প্রশ্ন ওঠেআসলে শ্রী কে আগাগোড়াই পছন্দ ছিলনা অনুপের মা এরচাকরি বংশধর এসব তার কাছে তাসের চাল ছিলস্ত্রী  এর চেয়ে মা কেই বেশি গুরুত্ব দিতো অনুপ,তাই শেষ অবধি মা এর কথা মতো শ্রী কে ডিভোর্স দেয় সেশ্রী প্রথমে রাজি না হলেও চাকরি ছাড়ার শর্ত সে মানতে পারেনিতাই শেষ অবধি ডিভোর্স হয় অনুপ আর শ্রীময়ীর
                       শ্রী এর অন্যমনস্কতায় হঠাৎ গাড়ির সাথে এক বাচ্চা  মেয়ের ধাক্কা লেগে যায়বয়স তার ১৪-১৫ হবেতড়িঘড়ি করে দুজনেই নেমে আসে গাড়ি থেকে পায়ে চোট পেয়েছিলো মেয়েটিতাকে বাড়ি পৌঁছে দেবার জন্য ঠিকানা জিজ্ঞেস করলে মেয়েটি বারবার এক কথাই বলছিল বাড়ি নেই,যেখানে থাকি ওখানে যেতে পারবেনা দিদি, আমি চলে যাব একাই' সে বারবার বললেও শ্রী তাকে ছাড়েনি,জোর করে নিজের ফ্ল্যাটএ নিয়ে যায় তাকে
          ফ্ল্যাটে নিয়ে গিয়ে মেয়েটির পায়ে ওষুধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দেয় অনিমাশ্রী তাড়াতাড়ি করে তার জন্যে ফ্রিজ থেকে কিছু মিষ্টি আর কোক এনে দেয়মেয়েটি খেতে লজ্জা করলেও দুজন মিলে জোর করেই তাকে খাওয়ায়খেতে খেতে মেয়েটিকে আবারো ঠিকানা জিজ্ঞেস করলে সে একই কথা উত্তর দেয়কিন্তু শেষ অবধি তার চোখে জল এলে বাচ্চা মেয়েটি কেঁদে ফেলেবলে
_আমার বাড়ি অনেক দূর দিদিশহরে না গেরামে থাকতুম কাকা কাকির সাথেবাপ মা আগেই মরেচেকিছুদিন আগে কাকি কোলকেতা ঘুরাতে এনেচিলআমার মাসির পরিচয় দিয়ে এক মেয়ের ঘরে আমায় থুয়ে চলে যায় কাকিকিন্তু পরে বুঝলুম ওই মেয়ে মানুষ ভালো নয়গো দিদি আমার মাসিও নয়পোশাক তার বড়ই নজ্জারগো দিদিআজ ফাক পেয়ে পাইলেছিকিন্তু কিছুই চিনতে পারছিলুমনে এই নতুন জায়গায়…..
        কথা শেষ না করেই মেয়েটি কাঁদতে শুরু করলো আবারতার কথায় শ্রী অনিমা দুজনেরই খুব খারাপ লাগলো
_কেঁদোনা, তোমার কোনো ভয় নেইআজ থেকে তুমি এখানেই থাকবেআমি একাই থাকি,তুমি আজ থেকে আমার সাথেই থেকো
_বাট শ্রী তুইতো বেশিরভাগ সময় অফিসেই থাকিস, একা বাচ্চা মেয়ে কিকরে থাকবে!!
_ভেবোনি গো দিদি আমি কাজকম্ম সব পারি আমি তোমার এখানে কাজ করে দেবো, রান্নাবান্নাও করে দেবোতুমি একটু আমায় থাকতে দেওগো
_তুমি এখানেই থাকবে আমিতো বললামআর ওত কাজের আমার প্রয়োজন নেই
      সব কথা শেষ করে কিছুক্ষন থেকে অনিমা চলে গেলো নিজের বাড়িমেয়েটি ততক্ষণ তাদের সাথেই বসেছিলঅনিমা যেতেই শ্রী তাকে তার একটা জামা বের করে দিয়ে বললো তুমি গিয়ে স্নান করে এসো, আমি ততোক্ষণ কিছু রান্না করে নেইএতোদিন ছিলাম নাবাজার নেইডিম আলু দিয়ে ডাল সেদ্ধ করছিআজ এটা দিয়েই খেয়ো
     শ্রী এর কথায় ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানিয়ে সে স্নান চলে গেলোতারপর সময়মত দুজন মিলে রাতের খাবার খেয়েনিলপাশের ঘরে মেয়েটির থাকার ব্যবস্থা করে দেয় শ্রীকেননা রাতে নেশা না করে শ্রী ঘুমোতে পারতো নাওয়াইন সাথে তিনটে সিগারেট ছিল তার ডেইলি রুটিনের মধ্যে
       পরদিন সকালে শ্রী এর ওঠার আগেই মেয়েটি উঠে ঘরদোর পরিষ্কার করতে থাকেতারপর শ্রী এর ঘরে দরজা ধাক্কা দেয় দিদি উঠে পরোগোসকাল হয়েচেআপিস যাবেনা?
    মেয়েটির চিৎকার ঘুম ভাঙে শ্রীরতুই এতো সকালেঝাড়ু হাতে কি করছিস??  তোকে কাল বললাম না যে আমার কাজ করার দরকার নেইকাজের লোক আছে,একটু পরেই চলে আসবে
_ “ তা তুমি যাই বোলো দিদিবসে বসে খেতে পারবনিতুমি কাজের লোক ছাড়িয়ে দাও
   বলতে বলতে শ্রী এর ঘরে ঢুকে পরিষ্কার করতে শুরু করলো সে মা দিদি, বিড়ির ছাই কোত্থেকে এলো তুমি খাও নাকি দিদি
_ “ হুম্
_ “খেয়োনিকো দিদিবাচ্চাকাচ্চা হবেনি
_ “ চুপ করবি তুইপাকাপাকা কথা খালি ঝাড়ু রাখব্রেকফাস্ট রেডি করছি, খেয়ে নেকিছুক্ষণ পর বেরবো তোকে নিয়েতোর যা যা  প্রয়োজন বলবি,কিনে আনবো
      এভাবে কিছুদিন কেটেগেলো শ্রী এর সাথে থাকতে থাকতে বানী আধুনিকতার অনেক ধাপ শিখেগেলো শ্রী সময় না পেলে নিজেই গ্যাস জ্বালিয়ে রান্না করেনিতো শ্রী এর অনুপস্থিতি তে নিজেই বাড়ির কাজ করে টিভি দেখতো গান শুনতোনিজের বাড়ির মতোই সেখানে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিয়েছিলো সেশ্রীর ছোটখাটো দেখাশুনো থেকে শুরু করে সময়মত ওষুধ হাতে তুলে দেবার দায়িত্ব নিজেই নিয়েছিলো বানীশ্রীও তাকে যথেষ্ট সময় দিতোঅফিস থেকে ফিরে তার সাথে বসে গল্পকরা,সময় পেলে দুজনে ঘুরতে যাওয়াবানীকে পেয়ে ফ্রেন্ডসজোন থেকে কিছুটা সরে গিয়েছিল শ্রী
        একদিন দুপুরে অফিসে কাজ করতে করতে ফোন আসে শ্রীরওপার থেকে শুভর গলাআজ দেখা করতে পারবি একটু? খুব আর্জেন্ট
আমার ফ্ল্যাটে চলে আয়আমি কিছুক্ষণ বাদেই ফিরবোগিয়েই বেরতে পারবনাবানী একা থাকে…..”
তুই খুব বানীকে নিয়ে ভাবিস তাইনা?? আগে তাও তোকে সন্ধ্যায় দেখতাম বাইরে ফ্রেন্ডসদের সাথে আমার সাথেও কফি খেতে যেতিএখন একটা দিনও যাস না
অভিযোগ করার জন্য ফোন করেছিস কি?? বললাম তো চলে আয় বাড়িতে যা বলার ওখানেই বলিস বায়,কাজ আছে     বলে ফোন কেটে দেয় শ্রী
            শুভ শ্রী এর কলেজ ফ্রেন্ডঅন্যান্য পুরুষ বন্ধুদের থেকে একটু কাছেরই ছিল সে,শুধু বন্ধুই ছিলকিন্তু শ্রী এর প্রতি শুভর দুর্বলতা ছিলকলেজ লাইফ থেকে শ্রী কে পছন্দ করতো সেকিন্তু বলার সাহস ছিলনাযদি ভালোবাসার কথা বললে বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যায় সেই ভয়েই সে চুপ ছিলএমনকি চোখের সামনে অন্যের সাথে তার ভালোবাসার মানুষটার বিয়েও দেখেছিলকিন্তু শ্রী এর ডিভোর্স এর পর বুকের ভেতর আশার আলোটা খানিকটা জেগে উঠেছিলো আবারতাই সে ঠিক করে নিজের মনের কথা আর না চেপে বলে দেবে
         সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফিরে ফ্রেস হয়ে কফি খেতে খেতে বানীর সাথে গল্প করছিলো শ্রীকলিংবেল এর আওয়াজ, বুঝলো শুভ এসেছেশ্রী এর সাথে থাকতে থাকতে বানী তার বন্ধুদের চিনে ফেলেছিলশুভকেও সে চিনতোদরজা খুলতেই দেখে হাতে গোলাপ ফুলের তোড়া,কিছু চকলেট বানীর জন্য আর শ্রী এর জন্যে একটা গিফটওসব হাতে দিতেই শ্রী বলে উঠলো  আদিক্ষেতা নাকি!! এসব কেনো এনেছিস তুইজানিস আমার পছন্দ না এসব
না পছন্দ হলে ফেলে দেকিন্তু আমিতো জানতাম তুই গোলাপ ভালোবাসিসএনেছি যখন রাখ দয়া করে
দাঁড়িয়ে না থেকে বোস কফি খাবিতো”?
খাবো পরে,আগে তোর সাথে কিছু কথা আছেনা বলা অবধি কফি কেন জলও নামবেনা গলাদিয়ে
কি এমন কথা তোর কি হয়েছে বল
দেখ শ্রী, অনুপ তো আবার বিয়ে করলোতুই একাই থাকছিসনতুন করে জীবনটা সাজাবি আবার? আমি থাকবো তোর সাথে সারাজীবন……”
তুই তো সব জানিস শুভজেনেশুনে এসব কেনো বলছিস?  আর আমিতো ভালো আছি বানীকে নিয়েঅনুপ বিয়ে করেছে তা নিয়ে আমার আক্ষেপ আগে ছিলএখন নেইকেননা ওর মতো মানুষকে ভালোবাসাটা আমার লাইফের ভুল স্টেপ ছিল আমার ডিভোর্সের কারণ টাও তুই জানিসতোর বাবা মা মেনে নেবে একটা ডিভোর্সি মেয়েকে”?
বাবা মা জানে সবতোকে তো মা আগে থেকেই মেয়ের মতো ভালোবাসেওদের সম্মতি নিয়েই আজ বললাম তোকেআর আমি অনুপের মতো ভেড়া নই তুই জানিস
ঠিকাছে আমি ভেবে তোকে জানাবো
দে এখন কফি দে
হ্যাংলাবলে হাসতে হাসতে শ্রী রান্না ঘরে কফি বানাতে গেলো 
    শুভ আর শ্রী এর সব কথা আড়াল থেকে বানী শুনেছিলোশ্রী রান্না ঘরে যেতেই দিদি তোমার বে হয়ে গেছে??? এতোদিন তো বলনি
তুই জেনে কি করতি শুনি
কিছু করতে হয়তো পারতুম নে,কিন্তু তুমি এয়োতি??  শাখা সিঁদুর এর চিহ্ন টুকুও তোমার শরীরে নেইকোছাড়াছাড়ি হয়ে গেলেও স্বামী তোমার জীবিত…. .” বানীর কথা শেষ না হতেই তার উপর চিৎকার করে ওঠে শ্রী….
কিসের স্বামী????  কে স্বামী??  ওই ছোটোলোকটা??? যে ডিভোর্স এর এক বছর না যেতেই আবার বিয়ে করে নিলো সে স্বামী??  তুই এসবে কেনো নাক গলাচ্ছিসছোটো ছোটোর মতো থাক
       শ্রীর চিৎকার শুনে রান্নাঘরে ছুটে আসে শুভ বুঝতে পারে বানীর উপর রাগারাগি করছিল সেতাই শ্রী কে থামিয়ে বানীকে সেখান থেকে নিয়ে যায় শুভবানী বুঝতে পারে শ্রীর কথা তাই কিছু না বলে চুপচাপ চোখের জল লুকিয়ে সেখান থেকে চলে যায় তার ঘরে শুভ কিছুক্ষন থেকে অন্য কথা বলে শ্রীর মাথা করে দিয়ে ফিরে যায়
              শ্রী কিছুক্ষন চুপচাপ থেকে সিগারেট এর মধ্যে দিয়ে নিজেকে ফ্রেস করে নেয়বুঝতে পারে বানীর উপর অহেতুক সে রাগারাগি করেছেরান্নাঘরে গিয়ে বানীর পছন্দের খাবার বানিয়ে নিয়ে যায় তার ঘরেশ্রী ঘরে ঢুকতেই বানী বলেচলে যাওগো দিদিআমি খাবনি কিচ্ছুআমায় তুমি ক্ষমা করে দাওগো দিদিভুলেগেছিলুম গো যে আমি তোমার আশ্রিতাতোমার জেবনে কি হয়েচিল তা আমি জানিনেগোআমি না জেনেই তোমায় আঘাত দিয়েচিআমায় তুমি কাল ওই মেয়ে মানুষএর কাচেই দিয়ে এসো দিদিআমি ওখানেই থাকবোগাঁয়ে ফিরলে কাকিতো আবার দে যাবে,তার চেয়ে ওখানে আগেই চলে যাইশুভ দাদাবাবু খুব ভালো দিদি তোমায় বে করতে চেয়েছেএতদিন তো সুখ পাওনিএখন পাবে দিদি,আমি বলচিএই দাদাবাবু তোমায় খুব ভালো রাখবে
         বানীর কথা গুলো মন দিয়েই শুনছিল শ্রী
থাপ্পড় এমন একটা দেবো, সব পাকামো বের হয়ে যাবেখুব বড় হয়ে গেছিস না??? খালি বড় বড় কথাকোথায় যাবি তুই?? তোকে যেতে দিলে তো যা দেখি আমায় ছেড়ে, পা ভেঙে দেবোবলেই বানী কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে শ্রী
            তুই আমার সাথেই থাকবিসে আমি একাই থাকি বা বিয়েই হোক
  করবে তুমি শুভ দাদাবাবুকে বে???”
ঘাড় নেড়ে সম্মতির কথা জানায় শ্রী
            কিছুদিনের মধ্যে শুভর সাথে রেজিস্ট্রি হয় শ্রীরশ্রী এর সুবিধার্থে বাড়ির সম্মতিতেই শ্রী এর ফ্ল্যাট এই থাকতো শুভমাঝে মাঝে বাড়ি গিয়েও থাকতো তারাশাশুড়ি মা শ্রী কে বউমা কম মেয়ে বেশি ভাবতেনতার চাকরি করতেও কোনো অসুবিধে হতোনাশ্রী এর প্রতি শাশুড়ি মাএর ভালোবাসার খামতি ছিলোনাভালোবাসার যোগ্য সম্মান শ্রী দিত,মা এর মতো শাশুড়ি মাকে ভালোবাসতো সেবানী কে শ্রী লেখাপড়া করিয়ে শিক্ষিত করতে থাকেদুজনের ভালোবাসায় নিজের সব দুঃখের কথা ভুলে গিয়েছিলো বানীদেড় বছরের মাথায় ট্রিটমেন্ট করিয়ে মা হয় শ্রীতার নতুন জীবনের সব খবর অনুপের কানে গিয়েছিলোকিন্তু লজ্জায় শ্রী এর সামনে আসার মুখ তার ছিলোনাস্বামী, বোন(বানী), ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে সাজানো সংসারে নিজের সব অতীত ভুলে সুখেদুঃখে একসাথে ভালো থাকতে লাগলো শ্রীময়ী

-সায়নী সরখেল 
                   

Comments

Popular posts from this blog

Prem Mane Ato Kichhu by TIRTHARAJ BHATTACHARJEE

বাস্তব by TIRTHARAJ BHATTACHARJEE

মেঘলা by TIRTHARAJ BHATTACHARJEE